কে এই আলহাজ্ব এ.বি.এম.মহিউদ্দিন চৌধুরী ?
তিনি চট্টগ্রাম বাসীর অহংকার,তিনি সেই মহিউদ্দিন চৌধুরী!
বঙ্গবন্ধু যখন চট্টগ্রামে আসতেন ট্রেন থেকে নেমে প্রথমে জিজ্ঞেস করতেন আমার মহিউদ্দিন কই?
উনি সেই মহিউদ্দিন,১৯৮১ সালে নেত্রী যখন দেশে আসলেন তখন সবাই বাকশাল নিয়ে ব্যস্ত। এমনকি পার্টি অফিসও বেদখল, তালা মারা।ঢুকতে পারছেন না।তখন এই মহিউদ্দিনই চট্টগ্রাম থেকে দলবল লাঠিসোটা নিয়ে পার্টি অফিসের তালা ভেঙে অফিস দখল করেছিলেন এবং নেত্রীকে অফিস বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
উনি সেই মহিউদ্দিন,বঙ্গবন্ধু কে সপরিবারে হত্যার পর সব নেতা যখন আত্নগোপনে,উনি তখন মৌলভী ছৈয়দ,ফণীভূষণ,এস এম ইউসুফ সহ ওনার দলবল নিয়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে মোস্তাক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিবাদ সংগ্রাম করেছিলেন।
আজকের এই ছাত্রলীগ নেতারা মনে হয় মৌলভী ছৈয়দ, ফণীভূষণ সহ ওনাদের কে চিনেন বলে মনে হয় না।নামই শুনেছেন বলে মনে হয় না! অথচ ওনাদের সব্বোর্চ ত্যাগের বিনিময়ে আজকের চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগ।
উনি সেই মহিউদ্দিন,
যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি ক্যাম্পে শত নির্যাতনের মুখেও নতি স্বীকার করেননি।নির্যাতনের সময় পিপাসায় পাকিস্তানি মেজরের কাছে যখন পানি চেয়েছিলেন,তখন ঐ পাক মেজর বোতলে করে নিজের প্রস্রাব দিয়েছিলেন।
ঐ পরিস্থিতি আমার আপনারা কল্পনার বাহিরে ?তবুও মহিউদ্দিন মুখ খোলেন নি।
১৯৭৬ কি ১৯৭৭ সালে সামরিক সরকারের হাতে গ্রেফতার হয়ে যান।ছয় মাস পর মুক্তি পেয়ে দেখেন সংগীসাথীরা সবাই ভারতে আত্নগোপনে।তিনিও ভারত গিয়ে সবার সাথে যোগ দেন।
ঐ সময়ে ভারতেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়।বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে তাদের।নেতা হিসেবে সহকর্মীদের থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব এসে পড়ে মহিউদ্দিনের উপর।কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন মহিউদ্দিন। সেটা জানাজানি হয়ে গেলে পেশা পরিবর্তন করেন তিনি।সাঙ্গু ভ্যালি নামে একটি রেস্টুরেন্টে বয় হিসেবে চাকুরি নেন।
পাশাপাশি আরেকটি হোটেলে ভাত রান্নার চাকুরি নেন।কিন্তু মুসলমান হওয়ায় তার রান্না করা ভাত খেতে আপত্তি ছিল অনেকের।ব্রাম্মন সেজে আরেকটি হোটেলে ভাত রান্নার কাজ নেন তিনি। এরপরপ রিচয় গোপন করে
মহিউদ্দিন,অমল মিত্র,অমলেন্দু সরকারসহ কয়েকজনমিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের সাব-কন্ট্রাক্টরের অধীনে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ নেন।মোটর ওয়ার্কশপেও কাজ করেন কিছুদিন।
উনি চাইলে হয়ত এসব এড়িয়ে যেতে পারতেন।কিন্তু নেতাকর্মীদের ভালবাসা দায়িত্ববোধ এড়াতে পারেননি বিবেকের কারণে,
সংগঠনের প্রতি ভালবাসার কারণে।
১৯৭৮ সালে মৌলভী সৈয়দ দেশে ফেরার সময় সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান।তাকে নির্মমভাবে গুলি করে খুন করা হয়।
ফিরতে গিয়ে অমল মিত্র গ্রেপ্তার হন।হুলিয়া মাথায় নিয়ে ১৯৭৯ সালের দিকে গোপনে দেশে ফেরেন মহিউদ্দিন।
জিয়া সরকার শুরু থেকেই তাদের প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেন।
এর মধ্যেই একদিন ছদ্মবেশে মহিউদ্দিন যান টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে।মাজার বলতে কিছু ছিল না।বাঁশের সীমানাও ভালোভাবে ছিল না।যখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়,তখন উনি চট্টগ্রাম থেকে নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে যান।গোপালগঞ্জ তো তখন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো ছিল।ফরিদপুর থেকে ইট আর সিমেন্ট সংগ্রহ করেন।বঙ্গবন্ধুর কবর ঘিরে পাকা দেয়াল তুলে দেন।
চট্টগ্রাম এর উত্তর কাট্টলী থেকে শ্বেতপাথরে‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’লিখে নিয়ে সেটা কবরে লাগিয়ে দেন।
আচ্ছা আপনাদের কি ১৯৯১ এর ঘুর্ণিঝড়ের কথা মনে আছে?
চট্টগ্রামের বন্দরটিলায় তখন লাশের পর লাশ।লাশপচাঁ গন্ধে বাতাস তখন ভারী। চট্টগ্রামের অন্যন্যা নেতারা যখন নাকে রুমাল বেধে মায়াকান্নায় ব্যস্ত তখনএকমাত্র উনিই কোমর বেধে একের পর এক লাশ দাফন করেছেন।
পার্টির সাধারণ সম্পাদকইনামুল হক দানু যখন মারা যান তখন উনি নিজ হাতে দানু সাহেব কে গোসল করিয়েনিজে কবরে নেমে তার দাফনকার্য সম্পন্ন করেছিলেন।চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণ ও নেতাকর্মীর প্রতি ওনার মমত্ববোধ প্রশ্নাতীত।
নালার উপর যখন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করেছিলেন তখন অনেকেই ওনার সমালোচনা করেছিলেন।
আজ সেই শিক্ষাপীঠে ২০ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করছে।যারা এই শহরেরই নাগরিক,আপনার আমার ভাই-বোন, সন্তান।যখন মেয়র ছিলেন তখন সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমেচট্টগ্রামে কতগুলো স্কুল -কলেজ নির্মাণ করেছিলেন
আপনারা কি ভুলে গেলেন?
এক-এগারো সরকার যখন ক্ষমতায় তখন আওয়ামীলীগের প্রত্যেক নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক মামলা হয়েছিল।
সবাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল।একমাত্র উনিই চট্টগ্রাম ছেড়ে কোথাও যাননি।পরে দল সরকার গঠন করলে সবাই রাজনৈতিক বিবেচনায় সব মামলা প্রত্যাহার করেছিলেন। একমাত্র ব্যতিক্রম উনি।চাইলে উনিও পারতেন কিন্তু উনি উনার মামলা প্রত্যাহারের কোন আবেদন করেননি।
অন্তত গত ২০ বছরে উনাকে মুজিব কোট ছাড়া আওয়ামী লীগের কোন মিটিং সমাবেশে কেউ দেখেছেন বলে মনে করতে পারেন? (ঘরে ছাড়া)।বঙ্গবন্ধুর আদর্শ শুধু বুকেই নয়,পোশাকেও ধারণ করেছেন তিনি।চাইলে অন্য সবার মত শার্ট প্যান্ট, স্যুট বুট উনিও পরতে পারতেন।এমপি লতিফ সাহেবের উপর ক্ষেপার অন্যতম কারণ বঙ্গবন্ধুর পোশাকের অবমাননা,বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসা।
দীর্ঘদিন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।চাইলে হাজার কোটি টাকার মালিক হতেপারতেন।কিন্তু বলতে পারবেন কোটিপতি তালিকায় কত নম্বরে ওনার নাম?দোয়া চাই এই মনবতার ফেরিওয়ালার জন্য।আমি গর্বিত আমি চট্টগ্রাম বাসী এবং গর্বিত যে এমন নেতা দেখেছি।
আজ ১৫/১২/২০২১ ,২০১৭ সালে এই দিনে তিনি আমাদের ছেড়ে পড়লোক গমন করেন।
মানবতার ফেরীওয়ালা চট্টলবীর আলহাজ্ব এ.বি.এম.মহিউদ্দিন চৌধুরী
ভালো থাকুন পরপারে,
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।